মূসা আলাইহিস সালাম ও এক পাপিষ্ঠা নারীর কাহিনী (কাহিনীর নামে জালিয়াতী)


একদিন এক পাপিষ্ঠা নারী মূসা আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলল, আমি এক জঘন্য পাপ করে ফেলেছি। দয়া করে আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন, যেন তিনি আমাকে ক্ষমা করে দেন।

মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, তুমি কী করেছ? নারীটি বলল, আমি যিনা করেছি এবং এর ফলে যে সন্তান জন্মেছিল তাকেও হত্যা করেছি।
মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, চলে যাও এখান থেকে হে পাপিষ্ঠা! তা না হলে তোমার পাপের কারণে আকাশ থেকে আগুন নেমে এসে আমাদের সবাইকেও ধ্বংস করে দেবে।
নারীটি ভগ্ন হৃদয় নিয়ে চলে গেল। তখন জিবরাইল আলাইহিস সালাম এসে জিজ্ঞেস করলেন, হে মূসা! কেন আপনি এই নারীটিকে ফিরিয়ে দিলেন? আপনি কি এর চেয়েও জঘন্য ও গুরুতর পাপী সম্পর্কে জানেন না? মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, এর চেয়ে গুরুতর পাপী আবার কে? জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত তরক করে।
এটি একটি অলীক কাহিনী, যা মূসা আলাইহিস সালামের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে তা খুঁজে পাওয়া যায় না। সালাত তরক করার আযাব সম্পর্কে কুরআনের কত আয়াত এবং কত সহীহ হাদীস রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপক চর্চা দরকার। আর যিনা ও সন্তান হত্যা- উভয়টি যে ভয়াবহ কবীরা গুনাহ তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
একে তো ঘটনাটি যে ভিত্তিহীন- তা একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায়। তাছাড়া আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

قُلْ یٰعِبَادِیَ الَّذِیْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰۤی اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ  اِنَّ اللهَ یَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِیْعًا  اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ.
বল, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ- আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা যুমার (৩৯) : ৫৩

তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন- এ তো নবীদেরই শিক্ষা। মূসা আলাইহিস সালাম কি তা জানতেন না? মানুষকে তওবার দিকে আহ্বান করাই তো নবীদের অন্যতম প্রধান কাজ ছিল; সেখানে একজন নবী তওবাকারীকে ফিরিয়ে দিবেন? আল্লাহ আমাদের এজাতীয় কথা বলা ও বিশ্বাস করা থেকে হেফাজত করুন- আমীন।
নামায তরককারী কত ঘৃণিত- তা বুঝানোর জন্য এ জাল বর্ণনাটি পেশ করা হয়; অথচ ‘তারিকুস সালাহ’-নামায তরককারীর বিষয়ে বহু সহীহ হাদীস রয়েছে। এখানে কয়েকটি পেশ করা হল :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
العَهْدُ الّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصّلَاةُ، فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ.

আমাদের মাঝে ও তাদের মাঝের নিরাপত্তা-অঙ্গিকারের নিদর্শন হচ্ছে, সালাত। যে সালাত তরক করল, সে কুফরি করল। (অর্থাৎ যে পর্যন্ত তারা সালাত আদায় করবে তাদের জানমাল ইত্যাদির নিরপত্তার ক্ষেত্রে তারা মুসলিমদের মত গণ্য হবে।) -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬২১

আবুদ দারদা রা. বলেন, আমার প্রিয় (নবীজী) আমাকে ওসিয়ত করেছেন-
لَا تَتْرُكْ صَلَاةً مَكْتُوبَةً مُتَعَمِّدًا، فَمَنْ تَرَكَهَا مُتَعَمِّدًا، فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمّةُ.

(তন্মধ্যে একটি ছিল,) ইচ্ছাকৃত ফরজ সালাত তরক করো না। কারণ, যে ইচ্ছাকৃত ফরজ সালাত তরক করে তার থেকে আল্লাহর জিম্মা উঠে যায়। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৪০৩৪; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৫২০০

এছাড়াও নামায তরক বিষয়ে আরো অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। আমরা সেগুলোই বলব; কোনো জাল বর্ণনা বলব না। আল্লাহ আমাদের নামায তরক করা থেকে হেফাযত করুন। আমাদের নামাযকে সুন্দর করার তাওফীক দিন। হক আদায় করে সময় মত নামায আদায় করার তাওফীক দিন- আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *