কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে শিশুদের সাথে ব্যবহারের নির্দেশনা

 

স্নেহ দেখানো  

মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) … উসামা ইবনু যায়েদ ((রাঃ)) থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এবং হাসান ((রাঃ)) কে এক সাথে (কোলে) তুলে নিতেন এবং বলতেন, 
 

মুসাদ্দাদ (রহঃ) … উসামা ইবনু যায়েদ ((রাঃ)) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এবং হাসান ((রাঃ)) কে এক সাথে কোলে তুলে নিয়ে বলতেন, হে আল্লাহ্! আমি এদের দু’জনকে মহব্বত করি, আপনিও এদেরকে মহব্বত করুন। (বুখারী)


ইবনে মাযাহ হতে বর্ণিত হয়েছে যে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম সাহাবীদেরকে সাথে নিয়ে কোন একটা দাওয়াতে যাচ্ছিলেন এবং সেখানে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু রাস্তায় খেলা করছিলেন। তখন রাসুল (সাঃ) তার হাত প্রসারিত করে তাকে ধরতে গেলেন, তখন হাসান (রাঃ) এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে লাগলেন। কিন্তু রাসুল (সাঃ) এক পর্যায়ে তাকে ধরে ফেললেন এবং এরপর তার থুতনীর নিচে এক হাত রাখলেন এবং আরেক হাত  মাথায় দিয়ে তাকে চুম্বন করলেন এবং বললেন সে আমার একটি অংশ এবং আমি তার একটি অংশ মহান আল্লাহ পাক তাদেরকে ভালোবাসুন যারা  হোসেন কে ভালোবাসে। হোসেন হল গোত্রসমূহের মধ্যে একটি গোত্র। 
 
শুধু আমাদের নবী (সাঃ) নন, সাহাবাগণ ও শিশুদের ভালবাসতেন। আবূ ‘আসিম (রহঃ) … ‘উক্‌বা ইবনু হারিস ((রাঃ)) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আবূ বক্‌র ((রাঃ)) বাদ আসর এর সালাতান্তে (নামাজের পর) বের হয়ে চলতে লাগলেন। (পথিমধ্যে) হাসান ((রাঃ)) কে ছেলেদের সঙ্গে খেলা করতে দেখলেন। তখন তিনি তাঁকে কাঁধে তুলে নিলেন এবং বললেন, 
 

আমার পিতা কুরবান হউন! এ-ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাদৃশ্য আলীর সাদৃশ্য নয়। তখন আলী ((রাঃ)) হাসতেছিলেন। গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

মায়া ও মমতা প্রদর্শন 

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, 
 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা হাসান ইবনু ‘আলীকে চুম্বন করেন। সে সময় তাঁর নিকট আকরা‘ ইবনু হাবিস তামীমী উপবিষ্ট ছিলেন। আকরা‘ ইবনু হাবিস বললেনঃ আমার দশটি পুত্র আছে, আমি তাদের কাউকেই কোন দিন চুম্বন দেইনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পানে তাকালেন, অতঃপর বললেনঃ যে দয়া করে না, সে দয়া পায় না।

[মুসলিম ৪৩/১৫, হাঃ ২৩১৮, আহমাদ ৭২৯৩] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫৮)

সকল সন্তানকে সমান অধিকার দেয়া


ইয়াকূব ইবন সুফিয়ান (রহঃ) … হাবির ইবন মুফাযল ইবন মুহাল্লাব (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নুমান ইবন বশীর (রাঃ)-কে খুতবায় বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ 

তোমাদের ছেলেদের মধ্যে (সমতা এবং) ইনসাফ করবে, তোমরা তোমাদের ছেলেদের মধ্যে (সমতা এবং) ইনসাফ করবে।

গ্রন্থঃ সূনান নাসাঈ (ইফাঃ)
 
নোমান ইবনে বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, 
 
যে, তার পিতা তাকে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলেন, আপনি সাক্ষী থাকুন, আমি নোমানকে আমার অমুক অমুক মাল দান করলাম। তিনি বলেনঃ তুমি নোমানকে যেমন দান করেছো, তোমার অন্য সকল পুত্রকেও কি তদ্রূপ দান করেছো? তিনি বলেন, না। তিনি বলেনঃ তাহলে এ ব্যাপারে আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে সাক্ষী বানাও। তিনি বলেনঃ তাদের সকলে সমভাবে তোমার সাথে সদ্ব্যবহার করলে তা কি তোমাকে আনন্দিত করবে না? তিনি বলেন, হাঁ। তিনি বলেনঃ তাহলে এরূপ করো না।

গ্রন্থঃ সুনানে ইবনে মাজাহ

 

খুব বেশি সবর করতে হবে


আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, 

আমি দশটি বছর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমত করেছি। কিন্তু তিনি কক্ষনো আমার প্রতি উঃ শব্দটি করেননি। এ কথা জিজ্ঞেস করেননি, তুমি এ কাজ কেন করলে এবং কেন করলে না? 

[২৭৬৮; মুসলিম ৪৩/১৩, হাঃ ২৩০৯, আহমাদ ১৩০২০] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৯৯)
 
কুতায়বা (রহঃ) … আমর ইবনু সুলায়ম যুরাকী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবূ কাতাদা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, 
 

আমরা মসজিদে উপবিষ্ট ছিলাম, হঠাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূল আস ইবনু রবীর কন্যা উমামকে কোলে নিয়ে আমাদের নিকট আসলেন। তার মা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা যয়নব (রাঃ)। তিনি ছিলেন ছোট বালিকা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বহন করেই বেড়াতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করলেন তাকে কাঁধে রেখেই। তিনি ‘রুকু’ করার সময় তাঁকে কাঁধে রেখে দিতেন। দাঁড়ালে আবার কাঁধে তুলে নিতেন। এমনিভাবে তিনি তার সালাত শেষ করলেন।

 
সহিহ, আবু দাউদ হাঃ ৮৫১-৮৫৩, বুখারি হাঃ ৫১৬, ৪৯৯৬, মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) হাঃ ১১০১, ১১০২


সঠিক পথ নির্দেশ দেয়া


আমরা সবাই জানি লোকমান তার পুত্রকে কিভাবে হেকমত শিক্ষা দিয়েছেন। কোরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেন,
 

যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বললঃ হে বৎস, আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়। (৩১:১৩)

হে বৎস, নামায কায়েম কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ।(৩১:১৭)

 
মুআম্মাল ইবনু হিশাম …………. আমর ইবনু শুআয়েব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা এবং দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ 
 

যখন তোমাদের সন্তানরা সাত বছরে উপনীত হবে, তখন তাদেরকে নামায পড়ার নির্দেশ দেবে এবং তাদের বয়স যখন দশ বছর হবে তখন নামায না পড়লে এজন্য তাদেরকে মারপিট কর এবং তাদের (ছেলে-মেয়েদের) বিছানা পৃথক করে দিবে।

সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)  
 

নাসর ইবনু আলী (রহঃ) … আয়্যূব ইবনু মূসা তার পিতা তার পিতামহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পিতা তার সন্তানকে ভাল আদব শিক্ষা দেওয়া অপেক্ষা মর্যাদাবান আর কোন জিনিস দান করতে পারেন না।

 তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১৯৫২ [আল মাদানী প্রকাশনী]

সন্তানের প্রতি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা


ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ 
সাবধান! তোমরা সকলেই রাখাল (দায়িত্বশীল) এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার রাখালী (দায়িত্ব পালন) প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যিনি জনগণের নেতা তাকে তার রাখালী (দায়িত্ব) বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। ব্যক্তি তার পরিবারের লোকদের রাখাল (অভিভাবক)। তাদের ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর সংসারের রাখাল (ব্যবস্থাপিকা)। তাকে এর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। গোলাম তার মনিবের সম্পদের রাখাল (পাহারাদার)। তাকে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হবে। অতএব, সাবধান! তোমরা সকলেই রাখাল এবং তোমাদের সকলকেই নিজ নিজ রাখালী বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। 
 সহীহ আবূ দাউদ , নাসা-ঈ,তিরমিজী  
 

মাঝেমধ্যে তাদের সাথে দুষ্টুমিতে শামিল হওয়া

মাহমুদ বিন ফরাবি থেকে বর্ণিত আছে যে যখন তিনি পাঁচ বছর ছিলেন তখন আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কিছু পানি বালতি থেকে নিয়ে তার মুখে ছিটিয়ে দিয়েছিলেন এবং একই কাজ সেখানে উপস্থিত অন্যান্য  শিশুদের সাথে করেছিলেন। (বুখারী)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাঁর নাতিদের সাথে সবসময়ই খেলাধুলা দুষ্টুমি করতেন এবং তাদেরকে তার কাঁধে চড়াতেন।  ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ 

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আলীর ছেলে হাসানকে স্বীয় কাধে বহন করছিলেন। এক লোক বলেন, হে বালক! কতই না উত্তম বাহনে তুমি আরোহণ করেছ (তার মন্তব্য শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে কতই না উত্তম আরোহী।

তিরমিযী ৩৭৮৪

শিশুদের সাথে ও সততা রক্ষা করতে হবে


আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, মিথ্যা বাস্তবিকপক্ষেও নয় এবং ঠাট্টাচ্ছলেও সংগত নয়। তোমাদের কেউ তার সন্তানকে কিছু দেয়ার ওয়াদা করে তা তাকে না দেয়ার বিষয়টিও সংগত নয়।

আল-আদাবুল মুফরাদ


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম শিশুদেরকে খুব ভালোবাসতেন।  তাদেরকে তিনি ভালোবাসা স্নেহ ও সম্মান দিতেন। 
আসুন আমরাও দোয়া করি যেন আল্লাহ পাক আমাদেরকে এভাবে আমাদের সন্তানদের সাথে আচরণ করার তৌফিক দান করেন আমিন। 

শেয়ার করে অন্য এক মুসলিম ভাই/বোনকে আমল করার সুযোগ করে দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *