আমরা জানি অনেক কিছুই। কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ কি করি?! ইবনে কাইয়ুম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, একটি বালিকা প্লেগ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুর পর তার বাবা তাকে স্বপ্নে দেখেন। বাবা মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ মা আখেরাত সম্পর্কে কিছু বল। উত্তরে মেয়েটি বলল, ‘ আব্বা আপনি এক ভয়াবহ বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন। দুনিয়াতে থাকতে আমরা অনেক আমল সম্পর্কে জানতাম, কিন্তু সে অনুযায়ী আমল করিনি। আল্লাহর কসম করে বলছি যে, দুনিয়ায় থাকতে একবার সুবহানআল্লাহ পড়া অথবা এক রাকাত নফল নামাজ পড়ার সওয়াব আমার আমলনামায় থাকা, সারা দুনিয়া এবং দুনিয়ায় যা আছে তার চাইতে আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়।’
মেয়েটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নসীহা আমাদের দিয়েছে। সেটা হলো আমরা জানি কিন্তু আমল করিনা। আমরা হয়তো অনেকেই এই বাক্যটার মর্মার্থ বুঝতে পারছিনা।
দুনিয়া ও আখিরাতে প্রিয় হতে চান? তাহলে কথা গুলো শুনুন। Musafir| মুসাফির|
আমরা জানি যে, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি ১০০ বার পড়লে আমাদের গুনাহ গুলো মাফ হয়ে যায়, যদিও গুনাহের পরিমাণ সমুদ্রের ফেনার সমপরিমাণ হয়। আমরা এটা জানি, কিন্তু আমল করি না।
আমরা জানি, দুই রাকাত সালাতুল দোহা নামাজ পড়লে, সেইদিন ৩৬০ টি সদাকার সওয়াব পাওয়া যায়, হজ এবং ওমরার সওয়াব পাওয়া যায়। এরপরও দিন যায় মাস যায়, অথচ আমরা এর উপর আমল করি না।
আমরা জানি, সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাত এর মাঝখানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়, যে ঠাট্টাচ্ছলেও মিথ্যা কথা বলে না। আমরা এটা জানি কিন্তু এর উপর কোন আমল করি না।
আমরা জানি, একদিনের নফল সিয়াম এর এত ফজিলত যে, এটা হাশরের ময়দানে আমাদের চেহারাকে আগুন থেকে ৭ খন্দক দূরে রাখবে। যেখানে এক খন্দক থেকে আরেক খন্দকের দূরত্ব হবে ৭০ বছর। আমরা এটা জানি কিন্তু আমল করছি না।
আমরা জানি, অসুস্থ ব্যক্তি কে জিয়ারত করলে বা দেখতে গেলে ৭০ হাজার ফেরেশতা আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তির জন্য মাগফেরাত এর দোয়া করতে থাকে। আমরা এটা জানি কিন্তু আমল করছি না।
আমরা জানি, কেউ যদি জানাযার সালাত আদায় করে এবং মৃত ব্যক্তিকে তার কবর পর্যন্ত অনুসরণ করে অর্থাৎ কবর পর্যন্ত যায়, তাহলে তাকে দুই কিরাত সওয়াব দেওয়া হয়। এক কিরাতের পরিমাণ হল উহুদ পাহাড়ের সমান। আমরা এটা জানি, কিন্তু জানাযার সালাত আদায়ে তৎপর হইনা।
আর জানাযার সালাত আদায় করলেও কবর পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির সাথে কবর পর্যন্ত যাইনা। আমরা জানি, যদি কেউ আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ নির্মাণ করে, হোক সেটা একটা ছোট পাখির বাসার সমান। আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করে দেবেন। আমরা এটা খুব ভালোভাবে জানি, তারপরেও মসজিদ নির্মানে দান সদকা করতে উৎসাহ পাইনা।
আমরা জানি, একজন বিধবা এবং তার সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করা সেই মুজাহিদের মত, যে সারাদিন রোজা রেখে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে এবং রাতে না ঘুমিয়ে সালাত আদায় করেন। অথচ আমরা এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন।আমরা জানি কোরআন পাঠ করলে প্রতি হরফে দশটা করে নেকি পাওয়া যায়। কেউ যদি একশটা হরফ পড়ে (না বুঝেই), তার জন্য কমপক্ষে ১০০০ টা নেকি। আমরা জানি কিন্তু আমল করি না। এ ব্যাপারে সিরিয়াস থাকলে প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে আমাদের মুখ থেকে খালি কোরআন তেলাওয়াত বের হতে থাকতো।
আমরা জানি, হজ্জ করলে এবং সেটি কবুল হলে তার একটাই পুরস্কার, সেটা হলো জান্নাত। মক্ববুল হজ ব্যক্তিকে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ বানিয়ে দেয়। আমরা জানি, কিন্তু এরপরও উদাসীন থাকি। যদিও আমাদের পূর্ববর্তীদের চেয়ে এখনকার সময় হজ্জ করা অনেক সহজ।
আমরা জানি, একজন মুমিনের সম্মান নিহিত রয়েছে তাহাজ্জুদ নামাজে। আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এবং সাহাবারা সবসময়ই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন, হোক আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত, অথবা রিযিকের তালাশে ব্যস্ত। কিন্তু কখনই তারা তাহাজ্জুদ নামাজ ছাড়তেন না। আমরা এটা জানি, কিন্তু কয়জন এ ব্যাপারে আন্তরিকতার সাথে আমল করি?
আমরা জানি, মৃত্যু নিশ্চিত। হাশর নিশ্চিত। কিন্তু এরপরেও কবরের জন্য এবং হাশরের ময়দানের জন্য কোনো রকম প্রস্তুতি নিচ্ছিনা। আমরা খুব সাবলীলভাবে আমাদের মৃত ব্যক্তিদের দাফন করে আসি। তাদের জানাজা আদায় করে আসি। কিন্তু একবারও নিজেদের এই দিনটার কথা ভাবি না, যেদিন আমাকেও দাফন করা হবে আমারও জানাযার সালাত আদায় করা হবে।
আমরা জানি, আমাদের প্রতিটি নিশ্বাসের সাথে সাথে আমরা মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যাচ্ছি। এরপরও আমরা দুনিয়ার খেল-তামাশা, আরাম-আয়েশ নিয়ে ব্যস্ত। আমরা সেই হিসাব দিবসের জন্য কোনরকম প্রস্তুতি নিচ্ছিনা।
"সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে, তার মাতা, তার পিতা, তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে। সেদিন প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে।" (আল কুরআন-৮০ঃ৩৪-৩৭)