সালফদেরমাযহাব এই যে, আল্লাহস্বীয় সত্বায় মাখলুকাতের উপরেআছেন। আল্লাহতাআ’লা বলেন,
আলোচ্য বিষয়
فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍفَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنتُمْتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
“তোমরাযদি কোন বিষয়ে মতবিরোধকরে থাক, তাহলে বিতর্কিতবিষয়টি আল্লাহ এবং রাসূলেরদিকে ফিরিয়ে দাও।যদি তোমরা আল্লাহর প্রতিএবং পরকালের প্রতি ঈমান এনেথাক। আরএটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিকদিয়ে উত্তম।” (সূরানিসাঃ ৫৯) আল্লাহ বলেনঃ
وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ مِنْشَيْءٍ فَحُكْمُهُ إِلَى اللَّهِ
“তোমরাযে বিষয়ে মতবিরোধ কর, তার ফায়সালা আল্লাহর নিকটে।” (সূরাশুরাঃ ১০) আল্লাহ আরোবলেনঃ
إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَادُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُوْلَئِكَ هُمْالْمُفْلِحُونَ وَمَنْ يُطِعْ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَوَيَتَّقِيهِ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الْفَائِزُونَ
“মুমিনদেরবক্তব্য কেবল এ কথাইযখন তাদের মধ্যে ফায়সালাকরার জন্য আল্লাহ ওতাঁর রাসূলের দিকে তাদেরকে আহবানকরা হয়, তখন তারাবলেঃ আমরা শুনলাম ওআদেশ মান্য করলাম।মূলতঃ তারাই সফলকাম।এবং যারা আল্লাহ ওরাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয়করে এবং তাঁর শাস্তিথেকে বেঁচে থাকে, তারাইকৃতকার্য।” (সূরানূরঃ ৫১–৫২) আল্লাহআরো বলেন,
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَاقَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْيَكُونَ لَهُمْ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْيَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّضَلَالًا مُبِينًا
“আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল কোনকাজের আদেশ করলে কোনঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদারনারীর সে বিষয়ে দ্বিমতপোষণ করার অধিকার নেই। আরযে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁররাসূলের বিরোধীতা করবে, সে সুস্পষ্টগোমরাহীতে পতিত হবে।” (সূরা আহযাবঃ ৩৬) আল্লাহতাআ’লা আরো বলেন,
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىيُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَايَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّاقَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
“অতএবতোমার পালকর্তার কসম, তারা ঈমানদারহবে না, যতক্ষণ নাতাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদেরব্যাপারে আপনাকে ন্যায়বিচারক বলেমেনে নেয়। অতঃপরআপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনরকম সংকীর্ণতা বোধ না করেএবং তা সন্তুষ্ট চিত্তেকবূল করে নেবে।” (সূরা নিসাঃ ৬৫) সুতরাংজানা গেল যে, মতভেদেরসময় ঈমানদারের পথ হল আল্লাহরকিতাব ও তাঁর রাসূলেরসুন্নাহর দিকে ফেরত যাওয়াএবং তাদের কথা শ্রবণকরা ও আনুগত্য করা। সাথেসাথে আল্লাহ এবং রাসূলেরকথার বাইরে অন্য কারওকথা গ্রহণ করার ব্যাপারেনিজের কাছে কোনরূপ স্বাধীনতানা রাখা। এছাড়া কেউ ঈমানদার হতেপারবে না। পরিপূর্ণরূপেনিজেকে কুরআন ও সুন্নাহরকাছে সোপর্দ করতে হবেএবং অন্তর থেকে সংকীর্ণতাঅবশ্যই দূর হতে হবে। এরবিপরীত করলে আল্লাহর আযাবেরসম্মুখীন হতে হবে।আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ يُشَاقِقْ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِمَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِالْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
“হেদায়েতেরপথ সুস্পষ্ট হওয়ার পর যেকেউ রাসূলের বিরোধীতা করবে এবং ঈমানদারদেরঅনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলবে, আমি তাকে ঐ দিকেইফেরাব যে দিক সেঅবলম্বন করেছে এবং তাকেজাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আরতা কতই না নিকৃষ্টগন্তব্যস্থান।” (সূরানিসাঃ ১১৫)
আল্লাহতাআ’লা স্বীয় সত্বায়মাখলুকের উপরে থাকার মাসআলাটিআল্লাহর কিতাব ও রাসূলেরসুন্নাহর দিকে ফেরানোর পরতা নিয়ে গবেষণাকারী অবশ্যইজানতে পারবে যে, আল্লাহতাআ’লা স্বসত্বায় সমস্তমাখলুকাতের উপরে আছেন।বিভিন্ন বাক্যের মাধ্যমে কুরআন ও সুন্নায়এই বিষয়টি অতি সুন্দরও সুস্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করাহয়েছে।
১) সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছেযে, আল্লাহ আকাশের উপরেআছেন। আল্লাহবলেন,
أَمْ أَمِنتُمْ مَنْ فِيالسَّمَاءِ أَنْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ
“তোমরাকি নিরাপদ হয়ে গেছযে, যিনি আকাশে আছেনতিনি তোমাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করবেননা, অতঃপর তোমরা জানতেপারবে কেমন ছিল আমারসতর্কবাণী।” (সূরামুলকঃ ১৭)
নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোগীকে ঝাড়–ফুঁক করারহাদীছে বলেনঃ
رَبُّنَا اللَّهُ الَّذِي فِيالسَّمَاءِ
“আমাদেরপ্রতিপালক আল্লাহ। যিনিআকাশে আছেন।” তিনিআরো বলেন,
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا مِنْرَجُلٍ يَدْعُو امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهَا فَتَأْبَى عَلَيْهِ إِلَّاكَانَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ سَاخِطًا عَلَيْهَا حَتَّى يَرْضَىعَنْهَا
“ঐসত্বার কসম, যার হাতেআমার প্রাণ রয়েছে, কোনপুরুষ তার স্ত্রীকে বিছানায়আসার জন্য ডাক দিলেস্ত্রী যদি বিছানায় যেতেঅস্বীকার করে তাহলে যিনিআকাশে আছেন, স্বামী সন্তুষ্টহওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনিঅসন্তুষ্ট থাকেন।”
২) আল্লাহ উপরে আছেন, একথা উল্লেখ করে আল্লাহবলেনঃ
وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ
“তিনিইমহা প্রতাপশালী স্বীয় বান্দাদের উপরেআছেন।” (সূরাআনআ’মঃ ১৮) আল্লাহআরো বলেনঃ
يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ
“তারাতাদের প্রতিপালককে ভয় করে চলে। যিনিতাদের উপরে আছেন।” (সূরা নাহলঃ ৫০) নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী,
لَمَّا قَضَى اللَّهُ الْخَلْقَ كَتَبَفِي كِتَابِهِ فَهُوَ عِنْدَهُ فَوْقَ الْعَرْشِ إِنَّرَحْمَتِي غَلَبَتْ غَضَبِي
“আল্লাহতাআ’লা যখন সৃষ্টিসমাপ্ত করলেন, তখন তিনিএকটি কিতাবে লিখে রাখলেন, নিশ্চয়ই আমার রহমত আমারক্রোধের উপর জয়লাভ করেছে। কিতাবটিতাঁর নিকটে আরশের উপরেরয়েছে।”
৩) আল্লাহর দিকে বিভিন্ন বিষয়উঠা এবং তাঁর কাছথেকে বিভিন্ন জিনিষ অবতীর্ণ হওয়ারকথা উল্লেখিত হয়েছে। উপরেরদিকে উঠা সব সময়নীচের দিক থেকেই হয়েথাকে। এমনিভাবেঅবতরণ করা সাধারণত উপরেরদিক থেকে নীচের দিকেইহয়ে থাকে। আল্লাহতাআ’লা বলেনঃ
إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ
“তাঁরইদিকে পবিত্র বাক্যসমূহ উঠেথাকে এবং সৎ আমলতাকে উপরের দিকে তুলেনেয়।” (সূরাফাতিরঃ ১০) আল্লাহ বলেনঃ
تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ
“ফেরেশতাগণএবং রূহ আল্লাহ তাআ’লার দিকে উর্ধ্বগামীহয়।” (সূরামা’আরিজঃ ৪) আল্লাহবলেনঃ
يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنْ السَّمَاءِ إِلَىالْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ
“তিনিআকাশে থেকেই জমিনে সকলকর্ম পরিচালনা করেন।” (সূরাসেজদাঃ ৫) আল্লাহর বাণী,
لَا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِيَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنزِيلٌ مِنْ حَكِيمٍحَمِيدٍ
“এতেমিথ্যার প্রভাব নেই, সামনেরদিক থেকেও নেই এবংপেছন দিক থেকেও নেই। এটাপ্রজ্ঞাময় প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।” (সূরাফুচ্ছিলাতঃ ৪২) আল্লাহ বলেনঃ
وَإِنْ أَحَدٌ مِنْ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّىيَسْمَعَ كَلَامَ اللَّهِ
“আরমুশরেকদের কেউ যদি তোমারকাছে আশ্রয় চায়, তবেতাকে আশ্রয় দেবে যাতেসে যাতে আল্লাহর কালামশুনতে পায়।” (সূরাতাওবাঃ ৬) কুরআন) যেহেতুআল্লাহর কালাম এবং তাআল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণহয়েছে তাই এর দ্বারাআমরা জানতে পারলাম যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বীয় সত্বায়উপরে রয়েছেন। নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
يَتَنَزَّلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَىالسَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ يَقُولُمَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ
“আমাদেরপ্রতিপালক আল্লাহ তাআ’লাপ্রতিদিন রাত্রের একতৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার আকাশেনেমে আসেন এবং বলতেথাকেন কে আছে আমারকাছে দু’আ করবে? আমি তার দু’আকবূল করব। কেআছে আমার কাছে চাইবে? আমি তাকে প্রদান করবো। কেআছে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে? আমি তাকেক্ষমা করার জন্য প্রস্ততআছি।” বারাবিন আযিব (রাঃ) এরহাদীছে আছে, নবী (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকেবিছানায় শয়নকালে পাঠ করার দু’আ শিক্ষা দিয়েছেন। সেইদু’আর মধ্যে এটাওআছে,
آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ وَبِنَبِيِّكَ الَّذِيأَرْسَلْتَ فَإِنْ مُتَّ مُتَّ عَلَىالْفِطْرَةِ
“আমিআপনার অবতারিত কিতাবের প্রতি ঈমান আনয়নকরেছি। এবংআপনার প্রেরিত নবীর উপর বিশ্বাসস্থাপন করেছি। এইদু’আ পাঠ করারপর যদি তুমি মৃত্যুবরণ কর, তাহলে তুমিফিতরাতের (ইসলামের) উপর মৃত্যু বরণকরবে।”
৪) আল্লাহ তাআ’লা উপরেহওয়ার গুণে নিজেকে গুণাম্বিতকরা। আল্লাহতাআ’লা বলেনঃ
سَبِّحْ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى
“আপনিআপনার সর্বোচ্চ ও সর্বমহান পালনকর্তারনামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন।” (সূরা আল–আলাঃ ১) আল্লাহ বলেনঃ
وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
“সেগুলোকে(ভূমন্ডল ও নভমন্ডলকে) সংরক্ষণকরা তাঁকে পরিশ্রান্ত করেনা। তিনিইসর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।” (সূরাবাকারাঃ ২৫৫) নবী (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরবাণী,
سبحان ربي الأعلى
“আমিপবিত্রতা বর্ণনা করছি আমারসুমহান প্রভুর।”
৪) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফার মাঠে ভাষণ দেয়ারসময় আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখে আকাশের দিকেইঙ্গিত করেছেন। তিনিউপস্থিত সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বলেছেন, ((ألا هلبلغت؟ আমি কি তোমাদেরকাছে দাওয়াত পৌঁছিয়ে দিয়েছি? উপস্থিত জনতা এক বাক্যেস্বীকার করল, হ্যাঁ আপনিআপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। তখননবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (أللهم اشهد) হে আল্লাহ! আপনি স্বাক্ষী থাকুন। একথা বলতে বলতে তিনিউপরের দিকে আঙ্গুল উঠিয়েইশারা করতে লাগলেন এবংমানুষের দিকে তা নামাতেলাগলেন। এহাদীছটি মুসলিম শরীফে যাবের(রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। এহাদীছটিতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহআকাশে। তানাহলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এর উপরের দিকেহাত উঠিয়ে ইশারা করাঅনর্থক বলে সাব্যস্ত হবে।
৬) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক দাসীকে প্রশ্ন করেছেন, আল্লাহ কোথায়? দাসী বলল, আকাশে। একথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,
أَعْتِقْهَا فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ
“তাকেমুক্ত করে দাও।কেননা সে ঈমানদার।” হাদীছটি মুসলিম শরীফে বর্ণিতমুআবীয়া বিন হাকাম আস্ সুলামী (রাঃ) এর দীর্ঘহাদীছের অংশ বিশেষ।এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনস্বীয় সত্বায় উপরে হওয়ারব্যাপারে সুস্পষ্ট দলীল। কেননা(أين) শব্দটি দিয়ে কোন বস্তরঅবস্থান সম্পর্কেই জিজ্ঞাসা করা হয়ে থাকে। নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মহিলাটিকে আল্লাহ কোথায়– একথা জিজ্ঞাসা করলেন, তখন মহিলাটিবললঃ তিনি আকাশে।নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার এ কথাকে মেনেনিলেন এবং বললেনঃ এটাইঈমানের পরিচয়। তাকেমুক্ত করে দাও।কারণ সে ঈমানদার।সুতরাং যতক্ষণ কোন মানুষআল্লাহ উপরে হওয়ার বিশ্বাসনা করবে এবং একথার ঘোষণা না দিবেততক্ষণ সে ঈমানদার হতেপারবে না।
আল্লাহতাআ’লা স্বীয় সত্বায়মাখলুকের উপরে হওয়ার ব্যাপারেকুরআন এবং সুন্নাহ থেকেউপরোক্ত দলীলগুলো উল্লেখ করা হল। এব্যাপারে আরো দলীল রয়েছে। যাএখানে উল্লেখ করা সম্ভবনয়। এসমস্ত দলীলের উপর বিশ্বাসস্থাপন করে সালাফে সালেহীনএ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, আল্লাহ স্বীয় সত্বায় মাখলুকেরউপরে রয়েছেন। এমনিভাবেতারা আল্লাহর গুণাবলী সুউচ্চ হওয়ার উপরওএকমত হয়েছেন।
وَلَهُ الْمَثَلُ الْأَعْلَى فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَالْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
“আকাশও জমিনে সর্বোচ্চ মর্যদাতাঁরই এবং তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সূরারুমঃ ২৭)
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا
“আল্লাহররয়েছে উত্তম নামসমূহ।কাজেই সেই নামসমূহ ধরেই(অসীলায়) তাঁকে ডাক।” (সূরা আ’রাফঃ ১৮০)
فَلَا تَضْرِبُوا لِلَّهِ الْأَمْثَالَ إِنَّاللَّهَ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
“তোমরাআল্লাহর জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকরো না। নিশ্চয়ইআল্লাহ অবগত আছেন আরতোমরা অবগত নও।” (সূরা নাহলঃ ৭৪)
فَلَا تَجْعَلُوا لِلَّهِ أَندَادًا وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ
“তোমরাজেনে বুঝে আল্লাহর জন্যঅংশীদার সাব্যস্ত করোনা।” (সূরাবাকারাঃ ২২) এমনিভাবে আরোঅনেক আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহরসত্বা, গুণাগুণ এবং কর্মসমূহ পরিপূর্ণএবং সর্বোচ্চ হওয়ার কথা প্রমাণিতহয়।
অনুরূপভাবেকুরআন, সুন্নাহ এবং পূর্ববর্তী সালাফেসালেহীনের সর্ব সম্মত ঐকমত্য, সুস্থ বিবেক এবং ফিতরাতওআল্লাহ উপরে হওয়ার কথাস্বীকার করে নেয়।
বিবেকএ কথা স্বীকার করেনেয় যে, উচ্চে হওয়াএকটি পরিপূর্ণ ও উত্তম গুণ। অপরপক্ষে উপরে হওয়ার বিপরীতেরয়েছে ত্রুটিপূর্ণ গুণ। আল্লাহরজন্য সকল পরিপূর্ণ বৈশিষ্টসাব্যস্ত। তাইআল্লাহর জন্য সুউচ্চে হওয়াবিবেক সম্মত। তাইউপরে হওয়াতে ত্রুটিপূর্ণ কোনগুণ সাব্যস্ত হওয়ার সুযোগ নেই। আমরাবলব যে, উপরে হওয়াসৃষ্টিজীব দ্বারা বেষ্টিত হওয়াকেআবশ্যক করে না।আর যে ব্যক্তি এরূপধারণা করবে, সে নিছকধারণা করল এবং বিবেকভ্রষ্টহিসাবে পরিগণিত হল।
মানুষেরস্বভাব জাত ধর্মের মাধ্যমেআল্লাহ মাখলুকের উপরে প্রমাণিত হয়। মানুষযখন আল্লাহর কাছে দু’আকরে, তখন অন্তরকে আকাশেরদিকে ধাবিত করে।এই জন্যই মানুষ যখনআল্লাহর কাছে দু’আকরে তখন ফিতরাতের দাবীঅনুযায়ী আকাশের দিকে হাতউত্তোলন করে। একদাহামদানী নামক জনৈক ব্যক্তিইমাম আবুল মা‘আলীআল–জুওয়াইনীকে বলল, আপনি তোআল্লাহ উপরে হওয়াকে অস্বীকারকরেন। আপনিআমাকে বলুন, আল্লাহ যদিউপরে না থাকেন, তাহলে আল্লাহ ভক্ত কোনমানুষ যখনই আল্লাহর কাছেদু’আ করে, তখনতার অন্তরকে উপরের দিকে ফেরানোরপ্রয়োজনীয়তা অনুভব করে কেন? এ কথা শুনে জুওয়াইনীমাথায় হাত মারতে মারতেবলতে থাকল হামদানী আমাকেদিশেহারা করে দিয়েছে! আমাকেহামদানী দিশেহারা করে দিয়েছে!
ঘটনাটিএভাবেই বর্ণিত হয়েছে।ঘটনার সূত্র সঠিক হোককিংবা ভুল হোক, তাতেকিছু আসে যায়না।প্রতিটি ব্যক্তির অনুভূতিও হামদানীর মতই। দু’আ করার সময়সবাই উপরের দিকে অন্তরও হাত উঠানোর প্রয়োজনীয়তাঅনুভব করে থাকে।এ কথা কেউ অস্বীকারকরতে পারবে না।
সহীহমুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা(রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন এক ব্যক্তির কথাউল্লেখ করেন, যে দীর্ঘসফর করে এলোমেলো কেশও ধুলামলিন পোষাক নিয়ে অন্তত্যব্যকুলভাবে আকাশের দিকে দু’হাত তুলে ডাকতেথাকে হে আমার প্রতিপালক! হে রব!! অথচ সেব্যক্তির পানাহার সামগ্রী হারাম উপার্জনের, পোষাকপরিচ্ছদ হারাম পয়সায় সংগৃহীত, এমতাবস্থায় কি করে তারদু’আ কবূল হতেপারে ? এমনিভাবে নামাযে বান্দা তারঅন্তরকে আকাশের দিকে ফেরায়। বিশেষকরে সে যখন সেজদায়যায় তখন বলে,سبحان ربي الأعلى অর্থঃআমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি আমারসুউচ্চ প্রভুর। যেহেতুসে জানে যে তারমা’বূদ আকাশে তাইসে এভাবে বলে থাকে।
যারাআল্লাহ আরশের উপরে হওয়াকেঅস্বীকার করে তারা বলেথাকে, আল্লাহ তাআ’লাছয়টি দিক থেকে মুক্তঅর্থাৎ আল্লাহ তা’আলাকোন নির্দিষ্ট দিকে অবস্থান করেননা; বরং তিনি সর্বদিকেসর্বত্র সদা বিরাজিত।আমরা বলব এ কথাটিএকটি বাতিল কথা।কেননা এটা এমন কথাযা আল্লাহ নিজের জন্যসাব্যস্তকৃত বিষয়কে অস্বীকার করারনামান্তর। আরসৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানীনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর জন্য যে সমস্তগুণাবলী সাব্যস্ত করেছেন, তাও বাতিল করারআহবান জানায়। তাএই যে, মহান আল্লাহতাআ’লা উপরের দিকেরয়েছেন। আল্লাহউপরে আছেন এ কথাঅস্বীকার করা হলে আল্লাহকেঅস্তিত্বহীন বস্তর সাথে তুলনাকরা হয়ে যায়।কেননা দিক হল ছয়টি। উপর, নীচ, ডান, বাম, পশ্চাৎএবং সম্মুখ। অস্তিত্বসম্পন্ন যে কোন বস্তকেএই ছয়টি জিনিষের সাথেসম্পর্কিত রাখতে হবে।এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বিবেকসম্মত ও গ্রহণযোগ্য।আল্লাহ তাআ’লার ক্ষেত্রেযদি ছয়টি দিককে সমানভাবেঅস্বীকার করা হয়, তাহলে আল্লাহ নাই একথাই আবশ্যক হয়ে যায়। (নাউযুবিল্লাহ) কোন মানুষের সুস্থ মস্তিষ্ক এইছয়টি দিকের বাইরে কোনজিনিষের অস্তিত্বকে সম্ভব মনে করতেপারে কি? কেননা বাস্তবেআমরা এ ধরণের কোনজিনিষের অস্তিত্ব খোঁজে পাইনি।আমরা দেখতে পাই যে, প্রতিটি মু’মিন ব্যক্তিবিশ্বাস করে যে, আল্লাহউপরে। আল্লাহরকিতাব, রাসূলের সুন্নাত, সালাফে সালেহীনের ইজমা, সুস্থ বিবেক এবং ফিতরাতওতা সমর্থন করে।যেমন আমরা ইতোপূর্বে বর্ণনাকরেছি। আমরাএও বিশ্বাস করি যে, আল্লাহতাআ’লা সকল বস্তকেবেষ্টন করে আছেন, কিন্তুআল্লাহকে কোন বস্তই পরিবেষ্টনকরতে পারে না।কোন মু’মিনের জন্যইএটা বৈধ নয় যে, সে মানুষের কথাকে গ্রহণ করতেগিয়ে কুরআন সুন্নাহকে প্রত্যাখ্যানকরবে। সেমানুষটি যত বড়ই হোকনা কেন। আমরাইতি পূর্বে দলীলগুলো বিস্তারিতভাবেআলোচনা করেছি।
যারাবলে আল্লাহ মু’মিনব্যক্তির অন্তরে আছেন, তাদেরকথার পক্ষে আমাদের জানামতেকুরআন, সুন্নাহ কিংবা সালাফে সালেহীনেরকোন উক্তি পাওয়া যায়না। কথাটিরঅর্থ যদি এই হয়যে, আল্লাহ বান্দার অন্তরেঅবতীর্ণ হয়ে আছেন, তাহলেকথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোওয়াট। আল্লাহ তাআ’লা এ থেকেঅনেক পবিত্র। বড়আশ্চর্যের কথা এই যে, কিভাবে একজন মানুষ কুরআন্তসুন্নাহরভাষ্য মতে আল্লাহ তাআ’লা আকাশে হওয়াকেপ্রত্যাখ্যান করে এবং আল্লাহতাআ’লা মু’মিনেরঅন্তরে থাকেন একথা মেনেনিতে পারে?! অথচ এরপক্ষে কুরআন সুন্নাহর একটিদলীলও মিলে না।
আল্লাহমু’মিন বান্দার অন্তরেআছেন এ কথার অর্থযদি এই হয় যে, মু’মিন ব্যক্তি সদা–সর্বদা অন্তরে আল্লাহকেস্মরণ করে, তাহলে একথা সত্য। তবেবাক্যটি পরিবর্তন করা দরকার, যাতেবাতিল অর্থের সম্ভাবনা দূরহয়ে যায়। এভাবেবলা উচিৎ যে, মু’মিন বান্দার অন্তরেসবসময় আল্লাহর যিক্র বিদ্যমানরয়েছে। তবেযারা এ কথা বলেতাদের কথা থেকে পরিস্কারবুঝা যায় যে, তাদের উদ্দেশ্য হল আল্লাহ আকাশেআছেন একথাকে অস্বীকার করাএবং মু’মিনের অন্তরেআল্লাহর অবস্থানকে সাব্যস্ত করা। অথচএটা বাতিল।
সুতরাংআল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাতএবং সালাফে সালেহীনের ইজমাবাদ দিয়ে এমন বাক্যব্যবহার থেকে সাবধান থাকাউচিৎ, যা সত্য–মিথ্যাউভয়েরই সম্ভাবনা রাখে। মুমিনদেরউচিৎ প্রথম যুগের আনসার–মুহাজির সাহাবীদের পথ অনুসরণ করা। তবেইতারা আল্লাহর সন‘ষ্টি অর্জনেসক্ষম হবেন। আল্লাহবলেন,
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنْ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَاللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيتَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
“আরযারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনসারদের মাঝেঅগ্রগামী এবং যারা তাদেরঅনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদেরপ্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাওতাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। আরতাদের জন্য প্রস্তত রেখেছেনএমন জান্নাত, যার তলদেশ দিয়েনদীসমূহ প্রবাহিত রয়েছে। সেখানেতারা থাকবে চিরকাল।এটাই হল মহান সফলতা।” (সূরাতাওবাঃ ১০০)
আল্লাহআমাদেরকে এবং আপনাদেরকে তাদেরঅন্তর্ভুক্ত করুন। আল্লাহআমাদের সকলকে তাঁর রহমতদান করুন। তিনিইমহান দাতা।
আল্লাহ তাআ’লা সুউচ্চ আরশের উপরে আছেন