ভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠান। সুন্দরী একটা মেয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে।
পরনে শাড়ি, চুলগুলো সিল্কি, সিম্পল সাজুগুজু করা।
কনক্লুডিংয়ে সে বলছিল,
“আজকের এই আমি! পুরোটাই বাবার অবদান। বাবা না থাকলে এতদূর আসতে পারতাম না।
He is the real hero of my Life”
উপস্থিত সকলের হাততালিতে মুখর হয়ে উঠলো হলরুম।
কিন্তু আমার ঠিক বুঝে আসলোনা এতগুলো শিক্ষিত মানুষের বিবেক একই সাথে কিভাবে লোপ পেলো।
শো-রুমে হালের আপডেট ভার্সন মোটরসাইকেলের সামনে ইয়া বড় চাবি হাতে ছবি তুলে একটা ছেলে ক্যাপশনে লিখলো,
“থেংকিউ বাবা, ইউ আর মাই সুপার হিরো।”
সেই ছেলেকে কেউ একজন অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে বসলো,
“তুমি কি কুরআন পড়তে জানো?”
আজকাল দেখি খেলোয়াড় মেয়ে, গিটারিস্ট ছেলে, অভিনেতা-অভিনেত্রী, নৃত্যশিল্পী, বিজাতীয় সংস্কৃতির ধারক কিংবা সমাজের চোখে নানাভাবে সফল অনেকেই পুরো ক্রেডিট বাবার দিকে দিয়ে দেয়। সাক্ষাৎকারে বলে,
বাবা তাদের জীবনের সুপার হিরো, রিয়েল হিরো।
আই এপ্রিশিয়েট।
সন্তানদের মানসিকতায় প্যারেন্টসের প্রতি এমন কৃতজ্ঞতাবোধ থাকাটা একটা মানবীয় গুণ। না থাকাটা বরং দোষের।
তবে কথা হচ্ছে,
একদিন সব উল্টে যাবে। গরম তাওয়ার সেই রুটির মতন।
সেই হিরো বাবা আসামী বেশে দাঁড়াবে কাঠগড়ায়। বাদী আদরের সন্তান।
সন্তান বলবে,
আমার বাবা আমাকে হাতে ধরে পথ চলা শিখিয়েছিলেন, কিন্তু দ্বীনের পথে চালাননি।
পদে পদে অনেককিছু শিখিয়েছেন, কিন্তু দ্বীন শেখাননি, কুরআন শেখাননি।
স্কুলে না গেলে মারতেন, নামাজে না গেলে কিছু বলতেন না।
আমার ক্যারিয়ারের পিছনে ওনার সবটুকু ইফোর্ট দিয়েছিলেন, কিন্তু আমার আখেরাতের ব্যাপারে ছিলেন উদাসীন।
আমরা বলি,
এই পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু একটাও খারাপ বাবা নেই।
একদিন আমরা অনেক খারাপ খারাপ বাবাদের দেখতে পাবো। যারা পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ বাবার সম্মাননা পেয়েছিলেন। সেদিন অনেক সন্তান (যাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত হয়েছে) বলবে, যেন তাদের বাবাকে তাদের সামনে আনা হয়। যাতে তারা তাদের বাবাকে পাড়িয়ে পাড়িয়ে জাহান্নামে যেতে পারে। কোরআনে এই ব্যাপারে আয়াত হচ্ছেঃ
"হে আমাদের পালনকর্তা! যেসব জিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদেরকে দেখিয়ে দাও, আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে তারা যথেষ্ট অপমানিত হয়।" (৪১:২৯)
এখানে মানুষ এর মধ্যে সেই সমস্ত বাবারাও থাকবেন, যারা সন্তানকে ইসলামের শিক্ষার ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন।
এখানে প্রশ্ন আসতে পারে যে, বাবা কেন? কেন মা নয়। কারণ পুরুষ হল পরিবারের জন্য দায়িত্বশীল। আলেমরা আরো বলেন, এক জন নারী চার জন পুরুষকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে। তাঁর বাবা, তাঁর ভাই, তাঁর স্বামী অথবা তাঁর ছেলে। এদের মধ্যে যে ই তাঁর উপর দায়িত্বশীল ছিল, অথচ পর্দার ব্যাপারে সিরিয়াস হয়নি, সে ই বিপদে পড়বে।
সেদিন হলো ইয়ামুদ্দিন।
সেদিন ইয়াওমুস সা’আহ!
ইয়াওমুল হিসাব!
দুনিয়ার অনেক সুপারহিরো বাবা সেদিন ভিলেনরূপে আবির্ভূত হবেন।
- মাহদী ফয়সাল